আমাদের এই প্রবন্ধ থেকে আপনি জানতে পারবেন সংখ্যাবাচক শব্দ কাকে বলে? সংখ্যাবাচক শব্দ কত প্রকার ও কি কি? নিচে বিষয়টি বিস্তার ভাবে আলোচনা করা হলো।
সংখ্যাবাচক শব্দ কাকে বলে?
ভাষাতত্ত্বে গণনার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পদগুলিকে সংখ্যাবাচক শব্দ বা সংখ্যাবাচক পদ বা সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলা হয়। এই শব্দগুলি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির পরিমাণ নির্দেশ করে। যেমন- এক, দুই, তিন, চার ইত্যাদি। তবে অনেক সংখ্যা বোঝাতে একাধিক সংখ্যাবাচক পদের একত্রে ব্যবহারও হয়, যেমন- একশো, পাঁচ হাজার, একচল্লিশ, দু’শো তিন, দু’হাজার চোদ্দ ইত্যাদি। পূরণবাচক সংখ্যার (প্রথম, দ্বিতীয় প্রভৃতি) সাথে এই শব্দগুলির সরাসরি সম্পর্ক আছে।
সংখ্যাবাচক শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
সংখ্যাবাচক শব্দ চার প্রকার:
- অঙ্কবাচক সংখ্যা
- পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যা
- ক্রম বা পূরণবাচক সংখ্যা
- তারিখবাচক সংখ্যা
অঙ্কবাচক সংখ্যা
অঙ্কবাচক সংখ্যা হলো সেই সংখ্যাবাচক শব্দগুলি যেগুলি সংখ্যা নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১০০, ১০০০, ১০০০০, ইত্যাদি।
পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যা
পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যা হলো সেই সংখ্যাবাচক শব্দগুলি যেগুলি কোনো বস্তু, ব্যক্তি, বা বিষয়ের পরিমাণ নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন- এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, পনেরো, বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই, শত, সহস্র, লক্ষ, কোটি, ইত্যাদি।
ক্রম বা পূরণবাচক সংখ্যা
ক্রম বা পূরণবাচক সংখ্যা হলো সেই সংখ্যাবাচক শব্দগুলি যেগুলি কোনো সমষ্টির বিভিন্ন উপাদানের ক্রমিক অবস্থান বর্ণনা করে। যেমন- প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ, ইত্যাদি।
তারিখবাচক সংখ্যা
তারিখবাচক সংখ্যা হলো সেই সংখ্যাবাচক শব্দগুলি যেগুলি কোনো নির্দিষ্ট দিনের তারিখ নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। যেমন- পহেলা, দোসরা, তেসরা, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী, পঞ্চদশী, ষোড়শী, সপ্তদশী, অষ্টদশী, ঊনবিংশী, বিংশী, ইত্যাদি।
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার ব্যাপক। যেকোনো ক্ষেত্রে যেকোনো সময় সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার হতে পারে। যেমন-
- গণনা করার জন্য, যেমন- একশো টাকা, পাঁচ জন ছাত্র, দশটি বই, ইত্যাদি।
- পরিমাণ নির্দেশ করার জন্য, যেমন- এক কেজি চাল, দুই লিটার দুধ, তিন গ্লাস জল, ইত্যাদি।
- ক্রম নির্দেশ করার জন্য, যেমন- প্রথম দিন, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় স্থান, ইত্যাদি।
- তারিখ নির্দেশ করার জন্য, যেমন- পহেলা বৈশাখ, দোসরা নভেম্বর, তেসরা জুন, ইত্যাদি।
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের কিছু উদাহরণ
-
গণনা করার জন্য:
- আমার কাছে একশো টাকা আছে।
- ক্লাসে পঁচিশ জন ছাত্র আছে।
- এই বাক্সে দশটি বই আছে।
-
পরিমাণ নির্দেশ করার জন্য:
- আমার ওজন ষাট কেজি।
- এই বাটিতে দুই লিটার দুধ আছে।
- এই বোতলে তিন গ্লাস জল আছে।
-
ক্রম নির্দেশ করার জন্য:
- আজ সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিন।
- আমি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছি।
- এই লাইনে আমি তৃতীয়।
-
তারিখ নির্দেশ করার জন্য:
- আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।
- আমার জন্মদিন দশম মার্চ।
- আজ তেসরা জুন, স্বাধীনতা দিবস।
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার ভাষার ব্যাকরণগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের বাক্য গঠন করতে পারি। যেমন-
-
সরল বাক্য:
- আমার একশো টাকা আছে।
- ক্লাসে পঁচিশ জন ছাত্র আছে।
- এই বাক্সে দশটি বই আছে।
-
জটিল বাক্য:
- আমি যদি একশো টাকা পাই, তাহলে একটি নতুন মোবাইল কিনবো।
- যদি ক্লাসে পঁচিশ জন ছাত্র থাকে, তাহলে ক্লাসটি শুরু করা যাবে।
- যদি এই বাক্সে দশটি বই থাকে, তাহলে আমি একটি বই নিতে পারি।
-
বিধেয় বাক্য:
- এখানে একশো টাকা আছে।
- ক্লাসে পঁচিশ জন ছাত্র আছে।
- এই বাক্সে দশটি বই আছে।
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ভাষাকে আরও সঠিক এবং সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারি।
- পরিমাণবাচক সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার:
- আমি এক কেজি চাল কিনেছি।
- আমার বাড়িতে দুই লিটার দুধ আছে।
- আমি তিন গ্লাস জল খেয়েছি।
- ক্রমবাচক সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার:
- আজ সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিন।
- আমি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছি।
- এই লাইনে আমি তৃতীয়।
- তারিখবাচক সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার:
- আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।
- আমার জন্মদিন দশম মার্চ।
- আজ তেসরা জুন, স্বাধীনতা দিবস।
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ভাষাকে আরও সঠিক এবং সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারি।
সংখ্যাবাচক শব্দের আরও কিছু ব্যবহার:
-
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিমাপ প্রকাশ করতে পারি। যেমন-
- এক মিনিট সময়
- এক ঘণ্টা সময়
- এক দিন সময়
- এক সপ্তাহ সময়
- এক মাস সময়
- এক বছর সময়
- এক মাইল দূরত্ব
- এক কিলোমিটার দূরত্ব
- এক গজ দৈর্ঘ্য
- এক ফুট দৈর্ঘ্য
- এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্য
- এক কেজি ওজন
- এক পাউন্ড ওজন
- এক লিটার পরিমাণ
- এক গ্যালন পরিমাণ
-
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্রম নির্দেশ করতে পারি। যেমন-
- প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়
- প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় শ্রেণী
- প্রথম স্থান, দ্বিতীয় স্থান, তৃতীয় স্থান
- প্রথম পুরস্কার, দ্বিতীয় পুরস্কার, তৃতীয় পুরস্কার
-
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের হিসাব-নিকাশ করতে পারি। যেমন-
- এক + এক = দুই
- দুই – এক = এক
- দুই x এক = দুই
- দুই / এক = দুই
-
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের তুলনামূলক বিবরণ দিতে পারি। যেমন-
- এই বাড়িটা আমার বাড়ির চেয়ে বড়।
- এই গাড়িটা আমার গাড়ির চেয়ে দ্রুত।
- এই ফলটা আমার ফলের চেয়ে মিষ্টি।
-
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের অনুমান বা ধারণা প্রকাশ করতে পারি। যেমন-
- আমার মনে হয়, এই পরীক্ষায় আমি কমপক্ষে পঞ্চাশ নম্বর পাব।
- আমি আশা করি, আগামী বছরের অর্থনীতি ভালো হবে।
সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ভাষাকে আরও সাবলীল এবং সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারি।
এই পোস্টটি ও পড়ুন: বিরাম চিহ্ন কি বা কাকে বলে?
সংখ্যাবাচক শব্দের MCQ
১. সংখ্যাবাচক শব্দের মূল একক হলো:
- (ক) এক
- (খ) শূন্য
- (গ) ক্রম
- (ঘ) তারিখ
উত্তর: (ক)
২. একাধিকবার একই গণনা করলে যে সমষ্টি পাওয়া যায় তাকে বলে:
- (ক) তারিখবাচক শব্দ
- (খ) ক্রমবাচক শব্দ
- (গ) পরিমাণবাচক শব্দ
- (ঘ) অঙ্কবাচক শব্দ
উত্তর: (গ)
৩. কোনো পূর্ণসংখ্যার পর যে সংখ্যাবাচক শব্দ আসে তাকে বলে:
- (ক) অঙ্কবাচক শব্দ
- (খ) ক্রমবাচক শব্দ
- (গ) পরিমাণবাচক শব্দ
- (ঘ) তারিখবাচক শব্দ
উত্তর: (খ)
৪. “দুই” শব্দটি কোন ধরনের সংখ্যাবাচক শব্দ?
- (ক) অঙ্কবাচক
- (খ) ক্রমবাচক
- (গ) পরিমাণবাচক
- (ঘ) তারিখবাচক
উত্তর: (ক)
৫. “অষ্টম” শব্দটি কোন ধরনের সংখ্যাবাচক শব্দ?
- (ক) অঙ্কবাচক
- (খ) ক্রমবাচক
- (গ) পরিমাণবাচক
- (ঘ) তারিখবাচক
উত্তর: (খ)
উত্তরসমূহ:
১. (ক), ২. (গ), ৩. (খ), ৪. (ক), ৫. (খ)
এই MCQ-গুলির মাধ্যমে সংখ্যাবাচক শব্দের মূল ধারণা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
উপসংহার
সংখ্যাবাচক শব্দ ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ের পরিমাণ, ক্রম, বা তারিখ নির্দেশ করতে পারি।