মূল্য কাকে বলে? মূল্য নির্ধারণের উদ্দেশ্য

এই প্রবন্ধটি থেকে আপনি জানতে পারবেন মূল্য কাকে বলে? মূল্য নির্ধারণের উদ্দেশ্য। এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তার ভাবে আলোচনা করা হয়েছে এখানে।

মূল্য কাকে বলে?

মূল্য হলো কোনো পণ্য বা সেবা পাওয়া বা ব্যবহার করার সুবিধা অর্জন করার বিনিময়ে ক্রেতা যে সকল ভ্যালু ত্যাগ করে তার যোগফল। অর্থাৎ ডলার, সেন্ট বা অন্য কোনো আর্থিক বিনিময় মাধ্যমে প্রকাশিত মূল্যমানকে মূল্য বলে। অন্যভাবে বলা যায়, একজন ভোক্তা একটা পণ্য ভোগের মাধ্যমে বা কোনো সেবা গ্রহণের মাধ্যমে যে সুবিধা পেল এবং তার বিনিময়ে যে পরিমাণ অর্থ দাতাকে প্রদান করে তাকে মূল্য বলে। যেমন: ১০ টাকার বিনিময়ে ক্রয়কৃত কলম থেকে ক্রেতা কাগজে লেখার সুবিধা পেল। আবার বিপণনে মূল্য বলতে এমন একটি বিন্দু বা পয়েন্টকে বোঝানো হয় যেখানে বিক্রেতা যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে ইচ্ছুক, ক্রেতাও ঠিক একই পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে রাজি থাকে।

মূল্য নির্ধারণের উদ্দেশ্য

বিপণনকারী পণ্যের মূল্য স্থির করার পূর্বেই নির্ধারণ করে নেয় মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্য কী হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট মূল্য নির্ধারণের উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। মূল্য নির্ধারণের সাধারণ উদ্দেশ্য হলো তীব্র প্রতিযোগিতা ও পরিবর্তনশীল চাহিদার মধ্যে প্রতিষ্ঠান যেন বাজারে টিকে থাকতে পারে। অধিক পরিমাণ মুনাফা অর্জনের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য বিপণনকারী সব সময় সচেষ্ট থাকে। বিনিয়োগ বা নিট বিক্রয়ের ওপর ভিত্তি করে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।

মূল্য নির্ধারণের অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলি হলো:

  • বাজার শেয়ার বৃদ্ধি: মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বাজার শেয়ার বৃদ্ধি করতে পারে। কম মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কম দামে পণ্য বা সেবা প্রদান করতে পারে এবং এর মাধ্যমে বাজারে বেশি সংখ্যক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারে।
  • প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সুরক্ষা: মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সুরক্ষা করতে পারে। প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বাজারে নিজের অবস্থান সুরক্ষা করতে পারে।
  • ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন: মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। ক্রেতাদের চাহিদা ও বাজেট বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হলে ক্রেতা সন্তুষ্ট হবে।
  • প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ গঠন: মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ গঠন করা যেতে পারে। উচ্চ মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডকে উচ্চমানের ও উন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে।

মূল্য নির্ধারণের উদ্দেশ্য নির্ধারণের সময় প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন:

  • পণ্যের ধরন: পণ্যের ধরন অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি শিল্পপণ্যের মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতির থেকে ভিন্ন।
  • ক্রেতাদের চাহিদা: ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। ক্রেতারা যদি উচ্চ মূল্যের পণ্য ক্রয় করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।
  • প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা: প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি মূল্য নির্ধারণ করা হলে ক্রেতারা অন্য প্রতিযোগীদের পণ্য বা সেবায় চলে যেতে পারে।
  • প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। যদি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাজার শেয়ার বৃদ্ধি হয়, তাহলে কম মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। যদি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য মুনাফা অর্জন হয়, তাহলে বেশি মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।

মূল্য নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন সিদ্ধান্ত। মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি

মূল্য নির্ধারণের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি নির্বাচন করার সময় প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন:

  • পণ্যের ধরন: পণ্যের ধরন অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি শিল্পপণ্যের মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতির থেকে ভিন্ন।
  • ক্রেতাদের চাহিদা: ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। ক্রেতারা যদি উচ্চ মূল্যের পণ্য ক্রয় করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।
  • প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা: প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি মূল্য নির্ধারণ করা হলে ক্রেতারা অন্য প্রতিযোগীদের পণ্য বা সেবায় চলে যেতে পারে।
  • প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। যদি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাজার শেয়ার বৃদ্ধি হয়, তাহলে কম মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। যদি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য মুনাফা অর্জন হয়, তাহলে বেশি মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।

মূল্য নির্ধারণের কিছু সাধারণ পদ্ধতি হলো:

  • খরচ-ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ: এই পদ্ধতিতে, পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়ের মোট খরচ নির্ধারণ করা হয়। এরপর, একটি নির্দিষ্ট মুনাফা যোগ করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
  • বাজার-ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ: এই পদ্ধতিতে, প্রতিযোগীদের মূল্য বিবেচনা করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
  • চাহিদা-ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ: এই পদ্ধতিতে, ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
  • অন্তর্নিহিত মূল্য নির্ধারণ: এই পদ্ধতিতে, পণ্যের গুণমান ও বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্কতা

মূল্য নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন সিদ্ধান্ত। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা উচিত।
  • মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের চাহিদা, প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা ও পণ্যের ধরন বিবেচনা করা উচিত।
  • মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনা করা উচিত।

মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করলে প্রতিষ্ঠান তার ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।

আমাদের আরেকটি পোস্ট পড়তে পারেন: বাজারজাতকরণ কাকে বলে?

বাজার শেয়ার বৃদ্ধির জন্য মূল্য নির্ধারণ

বাজার শেয়ার বৃদ্ধির জন্য মূল্য নির্ধারণ একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে। কম মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বাজারে বেশি সংখ্যক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারে। এতে করে প্রতিষ্ঠানের বাজার শেয়ার বৃদ্ধি পায়।

বাজার শেয়ার বৃদ্ধির জন্য মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত:

  • পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়ের খরচ: কম মূল্য নির্ধারণ করার ফলে প্রতিষ্ঠানের খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই খরচের বিষয়টি বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
  • প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা: প্রতিযোগীদের তুলনায় কম মূল্য নির্ধারণ করা হলে প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই প্রতিযোগিতামূলক অবস্থা বিবেচনা করে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
  • ক্রেতাদের চাহিদা: ক্রেতারা যদি কম মূল্যের পণ্য ক্রয় করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে কম মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।

বাজার শেয়ার বৃদ্ধির জন্য মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কৌশলগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে:

  • সরাসরি মূল্য হ্রাস: এই কৌশলে, পণ্যের মূল্য সরাসরি হ্রাস করা হয়।
  • ছাড় প্রদান: এই কৌশলে, পণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট শর্তের অধীনে হ্রাস করা হয়।
  • প্যাকেজিং মূল্য: এই কৌশলে, দুটি বা ততোধিক পণ্য একসাথে বিক্রি করে কম মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

বাজার শেয়ার বৃদ্ধির জন্য মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক থাকতে হবে যেন খরচের চেয়ে বেশি মূল্য হ্রাস না হয়। এতে করে প্রতিষ্ঠানের লাভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

উপসংহার

মূল্য নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপণন সিদ্ধান্ত। মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। বাজার শেয়ার বৃদ্ধির জন্য মূল্য নির্ধারণ একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে। তবে, এই কৌশল ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক থাকতে হবে যেন প্রতিষ্ঠানের লাভ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

Leave a Comment