বিশেষণ কাকে বলে? বিশেষণ পদ কয়? প্রকারউদাহরণ দাও

এই পোস্ট থেকে আপনি জানতে পারবেন বিশেষণ কাকে বলে? বিশেষণ পদ কয় প্রকার? এবং তার উদাহরণ। বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ে এই প্রশ্নটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে আর সেই প্রেক্ষিতে আমরা আজকে এই বিষয়টি বিস্তার ভাবে তুলে ধরলাম।

বিশেষণ কাকে বলে?

বাংলা ব্যাকরণের ভাষায়, যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম বা ক্রিয়াপদের অবস্থা, দোষ, গুণ, সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি উল্লেখ করে, তাকেই বিশেষণ পদ বলে।

উদাহরণ:

  • গুণবাচক বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো বস্তু বা ব্যক্তির গুণ বা বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, তাকে গুণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন: সুন্দর, গোলাপী, বুদ্ধিমান, সাহসী ইত্যাদি।

  • সংখ্যাবাচক বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো বস্তু বা ব্যক্তির সংখ্যা প্রকাশ করে, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলে। যেমন: এক, দুই, তিন, দশ, শত, হাজার ইত্যাদি।

  • পরিমাণবাচক বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো বস্তু বা ব্যক্তির পরিমাণ প্রকাশ করে, তাকে পরিমাণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন: লম্বা, চওড়া, মোটা, পাতলা, ভারী, হালকা ইত্যাদি।

  • ক্রমবাচক বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো বস্তু বা ব্যক্তির ক্রম বা পর্যায় নির্দেশ করে, তাকে ক্রমবাচক বিশেষণ বলে। যেমন: প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ইত্যাদি।

  • ভাববাচক বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো ক্রিয়াপদের গুণ, অবস্থা, প্রকৃতি ইত্যাদি নির্দেশ করে, তাকে ভাববাচক বিশেষণ বলে। যেমন: আস্তে, দ্রুত, ভালোভাবে, মন্দভাবে ইত্যাদি।

বিশেষণ পদ কয় প্রকার?

বিশেষণ পদ প্রধানত দুই প্রকার। যথা:

  • নাম বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো নামপদ বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যেমন: সুন্দর ছেলে, নীল আকাশ, বড় বাড়ি, ছোট ঘর ইত্যাদি।

  • ভাব বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য, সর্বনাম বা ক্রিয়াপদের গুণ, অবস্থা, প্রকৃতি ইত্যাদি প্রকাশ করে, কিন্তু কোনো নামপদ বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে না, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। যেমন: আস্তে এসো, দ্রুত দৌড়াও, ভালোভাবে পড়ো, মন্দভাবে কাজ করো ইত্যাদি।

বিশেষণ পদ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:

  • বিশেষণ পদ সবসময়ই বিশেষ্য, সর্বনাম বা ক্রিয়াপদের পরে ব্যবহৃত হয়।
  • বিশেষণ পদ সাধারণত বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে।
  • বিশেষণ পদ বিভিন্নভাবে বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হতে পারে।

বিশেষণ পদ বিভক্তিযুক্ত হওয়ার নিয়ম

  • গুণবাচক, সংখ্যাবাচক, পরিমাণবাচক ও ক্রমবাচক বিশেষণ পদ সাধারণত নাম পদকে বিশেষিত করে।

  • এই ধরনের বিশেষণ পদ বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হতে পারে।

  • উদাহরণস্বরূপ:

    • সুন্দর ছেলে (নাম পদ)
    • ছেলেটি সুন্দর (বিশেষ্য পদ)
    • সুন্দর ছেলেটিকে দেখে আমি খুশি (ক্রিয়াপদ)
  • ভাববাচক বিশেষণ পদ সাধারণত বিশেষ্য, সর্বনাম বা ক্রিয়াপদের গুণ, অবস্থা, প্রকৃতি ইত্যাদি প্রকাশ করে, কিন্তু কোনো নামপদ বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে না।

  • এই ধরনের বিশেষণ পদ সাধারণত বাক্যের শেষে ব্যবহৃত হয়।

  • উদাহরণস্বরূপ:

    • আস্তে এসো (ক্রিয়াপদ)
    • ভালোভাবে পড়ো (ক্রিয়াপদ)

বিশেষণ পদ ব্যবহারের কিছু কৌশল

  • বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যের অর্থকে স্পষ্ট ও সুন্দর করা যায়।
  • বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা যায়।
  • বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনা যায়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • সাধারণ বাক্য:

    • ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যটি স্পষ্ট ও সুন্দর করা হয়েছে:

    • বড় ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা হয়েছে:

    • সুন্দর ও বুদ্ধিমান ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে:

    • বড়, সুন্দর ও বুদ্ধিমান ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো।

বিশেষণ পদ ব্যবহারের আরও কিছু কৌশল:

  • বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে ইঙ্গিত, অনুমান বা কল্পনা প্রকাশ করা যায়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • সাধারণ বাক্য:

    • গাছটি দাঁড়িয়ে আছে।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যটিতে ইঙ্গিত প্রকাশ করা হয়েছে:

    • সুন্দর গাছটি দাঁড়িয়ে আছে।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যটিতে অনুমান প্রকাশ করা হয়েছে:

    • বিরাট গাছটি দাঁড়িয়ে আছে।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যটিতে কল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে:

    • রঙিন গাছটি দাঁড়িয়ে আছে।
  • বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে বিরোধ, সাদৃশ্য, তুলনা ইত্যাদি প্রকাশ করা যায়।

উদাহরণস্বরূপ:

  • সাধারণ বাক্য:

    • ছেলেটি দ্রুত দৌড়াচ্ছে।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যটিতে বিরোধ প্রকাশ করা হয়েছে:

    • ধীর কিন্তু দৃঢ় পায়ে ছেলেটি দ্রুত দৌড়াচ্ছে।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যটিতে সাদৃশ্য প্রকাশ করা হয়েছে:

    • ছেলেটি বনের বাঘের মতো দ্রুত দৌড়াচ্ছে।
  • বিশেষণ ব্যবহার করে বাক্যটিতে তুলনা প্রকাশ করা হয়েছে:

    • ছেলেটি বিদ্যুতের মতো দ্রুত দৌড়াচ্ছে।

বিশেষণ পদ ব্যবহারের কিছু নিয়ম

  • বিশেষণ পদ সাধারণত বিশেষ্য, সর্বনাম বা ক্রিয়াপদের পরে ব্যবহৃত হয়।
  • বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করার জন্য বিশেষণ পদ সাধারণত “এর, তার, সে, এই, সেই, ওই, যে, ঐ” ইত্যাদি অব্যয়ের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করার জন্য বিশেষণ পদ সাধারণত “এক, দুই, তিন, দশ, শত, হাজার” ইত্যাদি সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়।
  • বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করার জন্য বিশেষণ পদ সাধারণত “কত, কীরূপ, কতটা, কতখানি” ইত্যাদি প্রশ্নবোধক শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষণ পদ ব্যবহারের কিছু উদাহরণ:

  • গুণবাচক বিশেষণ:

    • সুন্দর মেয়ে, বুদ্ধিমান ছেলে, ভালো মানুষ, খারাপ কাজ, মন্দ কথা
  • সংখ্যাবাচক বিশেষণ:

    • এক ছেলে, দুই মেয়ে, তিনটি বাড়ি, দশটি কলম, শত বছর
  • পরিমাণবাচক বিশেষণ:

    • লম্বা ছেলে, চওড়া রাস্তা, ভারী বই, হালকা বাতাস
  • ক্রমবাচক বিশেষণ:

    • প্রথম দিন, দ্বিতীয় পাতা, তৃতীয় সারিতে, চতুর্থ ঘরে
  • ভাববাচক বিশেষণ:

    • আস্তে চলো, দ্রুত লেখো, ভালোভাবে পড়াশোনা করো, মন্দভাবে কথা বলো

বিশেষণ পদ বাক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বাক্যের অর্থকে স্পষ্ট ও সুন্দর করে তোলে। বিশেষণ পদ বিভিন্নভাবে বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষণ পদ ব্যবহারের কিছু কৌশল জানা থাকলে বাক্য রচনায় আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করা যায়।

আমাদের অন্য একটি পোস্ট: অব্যয় পদ কাকে বলে ও কত প্রকার?

  • বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য বিশেষণ পদ ব্যবহার করুন। যেমন, “ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো” বাক্যটিতে “বড়” বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যটিকে আরও স্পষ্ট করা যায়। “বড় ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো”।
  • বাক্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষণ পদ ব্যবহার করুন। যেমন, “গাছটি দাঁড়িয়ে আছে” বাক্যটিতে “সুন্দর” বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যটিকে আরও গুণগত মান বৃদ্ধি করা যায়। “সুন্দর গাছটি দাঁড়িয়ে আছে”।
  • বাক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিশেষণ পদ ব্যবহার করুন। যেমন, “ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো” বাক্যটিতে “বড়”, “সুন্দর” ও “বুদ্ধিমান” বিশেষণ পদ ব্যবহার করে বাক্যটিকে আরও বৈচিত্র্যময় করা যায়। “বড়, সুন্দর ও বুদ্ধিমান ছেলেটি ঘর থেকে বের হলো”।
  • বাক্যের মধ্যে ইঙ্গিত, অনুমান, কল্পনা, বিরোধ, সাদৃশ্য, তুলনা ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য বিশেষণ পদ ব্যবহার করুন।
  • বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য বিশেষণ পদকে বিভক্তিযুক্ত করুন। যেমন, “সুন্দর ছেলেটি” বাক্যে “সুন্দর” বিশেষণ পদকে বিভক্তিযুক্ত করে “সুন্দর ছেলেটির” করা যায়।
  • বাক্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষণ পদকে বিভক্তিযুক্ত করুন। যেমন, “সুন্দর মেয়েটি” বাক্যে “সুন্দর” বিশেষণ পদকে বিভক্তিযুক্ত করে “সুন্দরী মেয়েটির” করা যায়।
  • বাক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিশেষণ পদকে বিভক্তিযুক্ত করুন। যেমন, “বড় ছেলেটি” বাক্যে “বড়” বিশেষণ পদকে বিভক্তিযুক্ত করে “বড়ো ছেলেটির” করা যায়।
  • বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য বিশেষণ পদকে অব্যয়ের সাথে যুক্ত করুন। যেমন, “সুন্দর মেয়েটির” বাক্যে “সুন্দর” বিশেষণ পদকে অব্যয় “এর” সাথে যুক্ত করে “এর সুন্দর মেয়েটি” করা যায়।
  • বাক্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্য বিশেষণ পদকে অব্যয়ের সাথে যুক্ত করুন। যেমন, “বড়ো ছেলেটির” বাক্যে “বড়ো” বিশেষণ পদকে অব্যয় “সে” সাথে যুক্ত করে “সে বড়ো ছেলেটির” করা যায়।
  • বাক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার জন্য বিশেষণ পদকে অব্যয়ের সাথে যুক্ত করুন। যেমন, “বড় ছেলেটির” বাক্যে “বড়ো” বিশেষণ পদকে অব্যয় “সেই” সাথে যুক্ত করে “সেই বড়ো ছেলেটির” করা যায়।

বিশেষণ পদ ব্যবহারের কৌশল জানা থাকলে বাক্য রচনায় আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করা যায়।

উপসংহার

বিশেষণ পদ বাক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বাক্যের অর্থকে স্পষ্ট ও সুন্দর করে তোলে। বিশেষণ পদ বিভিন্নভাবে বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হতে পারে।

Leave a Comment