প্রিন্টার কি বা কাকে বলে? প্রিন্টার কত প্রকার ও কি কি?

আমাদের এই প্রবন্ধ থেকে আপনি জানতে পারবেন প্রিন্টার কি বা কাকে বলে? প্রিন্টার কত প্রকার ও কি কি? এখানে বিষয়টি বিস্তার ভাবে আলোচনা করা হলো।

প্রিন্টার কি বা কাকে বলে?

প্রিন্টার হল একটি কম্পিউটার যন্ত্র যা কম্পিউটারের তথ্যকে কাগজে বা অন্য কোনো উপকরণে স্থায়ীভাবে ধারণ করে। প্রিন্টার বিভিন্ন ধরনের তথ্য মুদ্রণ করতে পারে, যেমন লেখা, ছবি, গ্রাফিক, চার্ট, ইত্যাদি।

প্রিন্টার কত প্রকার ও কি কি?

প্রিন্টারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Impact Printer)
  • নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer)

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার হল সেই প্রিন্টার যেখানে কাগজের সাথে প্রিন্টারের হেডের সরাসরি সংস্পর্শে এসে প্রিন্ট হয়। ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের মধ্যে রয়েছে:

  • ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার (Dot Matrix Printer)
  • ডেইজি হুইল প্রিন্টার (Daisy Wheel Printer)

ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার

ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার হল একটি সাধারণ ধরনের প্রিন্টার যাতে একটি হেড থাকে। এই হেডটিতে সারি সারি ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। কাগজ যখন এই হেডের সামনে দিয়ে যায়, তখন এই ছিদ্রগুলো দিয়ে কালি বেরিয়ে এসে কাগজে পড়ে। এর ফলে কাগজে ছোট ছোট বিন্দুর একটি ছবি তৈরি হয়।

ডেইজি হুইল প্রিন্টার

ডেইজি হুইল প্রিন্টার হল একটি পুরানো ধরনের প্রিন্টার। এই প্রিন্টারটিতে একটি ঘূর্ণমান চাকা থাকে। এই চাকাতে বিভিন্ন অক্ষর ও চিহ্ন খোদাই করা থাকে। কাগজ যখন এই চাকার সামনে দিয়ে যায়, তখন এই চাকাটি ঘুরে এবং অক্ষর ও চিহ্নগুলো কাগজে ছাপিয়ে দেয়।

নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার

নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার হল সেই প্রিন্টার যেখানে কাগজের সাথে প্রিন্টারের হেডের সরাসরি সংস্পর্শ না এসে প্রিন্ট হয়। নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের মধ্যে রয়েছে:

  • লেজার প্রিন্টার (Laser Printer)
  • ইন্কেট প্রিন্টার (Inkjet Printer)
  • থেরমাল প্রিন্টার (Thermal Printer)

লেজার প্রিন্টার

লেজার প্রিন্টার হল একটি দ্রুতগতির প্রিন্টার যাতে একটি লেজার রয়েছে। এই লেজারটি কাগজের উপর একটি ছবি তৈরি করে। এরপর এই ছবির উপর বিদ্যুৎ প্রয়োগ করা হয়। বিদ্যুৎ প্রয়োগের ফলে কাগজের উপর কালি আটকে যায়।

ইন্কেট প্রিন্টার

ইন্কেট প্রিন্টার হল একটি সাধারণ ধরনের প্রিন্টার যাতে একটি হেড থাকে। এই হেডটিতে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। কাগজ যখন এই হেডের সামনে দিয়ে যায়, তখন এই ছিদ্রগুলো দিয়ে কালি বেরিয়ে এসে কাগজে পড়ে। এর ফলে কাগজে একটি ছবি তৈরি হয়।

থেরমাল প্রিন্টার

থেরমাল প্রিন্টার হল একটি বিশেষ ধরনের প্রিন্টার যাতে কাগজের উপর তাপ প্রয়োগ করে প্রিন্ট করা হয়।

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার ও নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার সুবিধা ও অসুবিধা

বৈশিষ্ট্য ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার
মূল্য তুলনামূলকভাবে কম তুলনামূলকভাবে বেশি
গতি ধীর দ্রুত
মান মাঝারি উচ্চ
শব্দ বেশি কম
নির্ভরযোগ্যতা কম বেশি
ব্যবহার সাধারণ কাজে বিশেষ কাজে

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের সুবিধা

  • মূল্য তুলনামূলকভাবে কম।
  • ছোট আকারের এবং হালকা।
  • শব্দ বেশি, তাই ব্যবহারকারীর জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।

ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের অসুবিধা

  • গতি ধীর।
  • মান মাঝারি।
  • নির্ভরযোগ্যতা কম।
  • ব্যবহার সাধারণ কাজে।

নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের সুবিধা

  • গতি দ্রুত।
  • মান উচ্চ।
  • শব্দ কম, তাই ব্যবহারকারীর জন্য আরামদায়ক।
  • নির্ভরযোগ্যতা বেশি।
  • ব্যবহার বিশেষ কাজে।

নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের অসুবিধা

  • মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি।
  • বড় আকারের এবং ভারী।

কোন ধরনের প্রিন্টার ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে ব্যবহারের প্রয়োজনের উপর। সাধারণ কাজে, যেমন লেখা, পাঠ্য, নোট ইত্যাদি মুদ্রণের জন্য ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ কাজে, যেমন ছবি, গ্রাফিক, চার্ট ইত্যাদি মুদ্রণের জন্য নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেজার প্রিন্টার এর বৈশিষ্ট্য

লেজার প্রিন্টার হল একটি দ্রুতগতির প্রিন্টার যাতে একটি লেজার রয়েছে। এই লেজারটি কাগজের উপর একটি ছবি তৈরি করে। এরপর এই ছবির উপর বিদ্যুৎ প্রয়োগ করা হয়। বিদ্যুৎ প্রয়োগের ফলে কাগজের উপর কালি আটকে যায়।

লেজার প্রিন্টারের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:

  • দ্রুতগতি: লেজার প্রিন্টারগুলি সাধারণত ইন্কেট প্রিন্টারের চেয়ে দ্রুতগতিতে মুদ্রণ করতে পারে। প্রতি মিনিটে ১০ থেকে ২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মুদ্রণ করা যেতে পারে।
  • উচ্চ মানের মুদ্রণ: লেজার প্রিন্টারগুলি উচ্চ মানের মুদ্রণ তৈরি করে। ছবি, গ্রাফিক এবং অন্যান্য ডেটাগুলি স্পষ্ট এবং তীক্ষ্ণভাবে মুদ্রিত হয়।
  • কম শব্দ: লেজার প্রিন্টারগুলি ইন্কেট প্রিন্টারের তুলনায় কম শব্দ তৈরি করে।
  • উচ্চ নির্ভরযোগ্যতা: লেজার প্রিন্টারগুলি সাধারণত উচ্চ নির্ভরযোগ্যতা প্রদর্শন করে।

লেজার প্রিন্টারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এগুলি হল:

  • উচ্চ মূল্য: লেজার প্রিন্টারগুলি সাধারণত ইন্কেট প্রিন্টারের চেয়ে বেশি দামি।
  • প্রিন্টারের জন্য কালি বা টোনার ব্যয়বহুল হতে পারে: লেজার প্রিন্টারের জন্য টোনার ব্যবহার করা হয়, যা ইঙ্কটির চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
  • প্রিন্টারটি ব্যবহারের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি: লেজার প্রিন্টারগুলি ব্যবহারের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। এটি প্রিন্টারটির কর্মক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব উন্নত করতে সহায়তা করে।

লেজার প্রিন্টারগুলি বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি ব্যবসায়, শিক্ষা, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িতে ব্যবহৃত হয়।

প্রিন্টারের ব্যবহার

প্রিন্টার বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন:

  • লেখা ও ছবি মুদ্রণ
  • গ্রাফিক ও চার্ট মুদ্রণ
  • বিল, চালান, ইত্যাদি মুদ্রণ
  • ফটোকপি তৈরি

প্রিন্টারের দাম

প্রিন্টারের দাম বিভিন্ন রকম হয়। ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের দাম ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারের তুলনায় বেশি। লেজার প্রিন্টারগুলোর দাম ইন্কেট প্রিন্টারের তুলনায় বেশি।

প্রিন্টারের সুবিধা ও অসুবিধা

সুবিধা

  • কম্পিউটারের তথ্যকে কাগজে বা অন্য কোনো উপকরণে স্থায়ীভাবে ধারণ করা যায়।
  • লেখা, ছবি, গ্রাফিক, চার্ট, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের তথ্য মুদ্রণ করা যায়।
  • দ্রুতগতিতে মুদ্রণ করা যায়।

অসুবিধা

  • প্রিন্টারটিকে ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।
  • প্রিন্টারের জন্য কালি বা টোনার লাগে, যা ব্যয়বহুল হতে পারে।
  • প্রিন্টারটি ব্যবহারের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।

প্রিন্টার নির্বাচনের বিষয়গুলো

প্রিন্টার নির্বাচনের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:

  • প্রিন্টারটি কি ধরনের কাজে ব্যবহার করা হবে?
  • প্রিন্টারটি কতটুকু দ্রুত মুদ্রণ করতে পারে?
  • প্রিন্টারটির দাম কত?
  • প্রিন্টারটির জন্য কালি বা টোনার কতটা ব্যয়বহুল?

আরো একটি পোষ্ট দেখুন: সফটওয়্যার কাকে বলে বা কি?

উপসংহার

প্রিন্টার হল একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার যন্ত্র। এটি বিভিন্ন ধরনের তথ্য মুদ্রণ করতে ব্যবহার করা হয়। প্রিন্টারের প্রকারভেদ, সুবিধা-অসুবিধা ও নির্বাচনের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা থাকলে সঠিক প্রিন্টার নির্বাচন করা সম্ভব।

Leave a Comment