নাটকের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য, উপাদান কয়টি ও কি কি, গঠন কৌশল

পোস্টটিতে আলোচনা করা হয়েছে নাটকের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য, উপাদান কয়টি ও কি কি, গঠন কৌশল নিয়ে। বাংলা বিষয়ে এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে তাই আমরা বিস্তার ভাবে নাটকের সকল কিছু আলোচনা করলাম আমাদের এই পোস্টটিতে।

নাটকের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

নাটক হলো এক ধরনের সাহিত্যকর্ম যা মঞ্চস্থ করার জন্য রচিত হয়। এটি কাহিনীনির্ভর ও চরিত্রমুখী সাহিত্য। নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মঞ্চস্থযোগ্যতা। নাটককে মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও, নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর চরিত্রমুখিতা। নাটকে চরিত্রের দ্বারা কাহিনী বিকাশ লাভ করে।

নাটকের উপাদান

নাটকের ছয়টি প্রধান উপাদান হলো:

  • চরিত্র: নাটকের প্রধান উপাদান হলো চরিত্র। চরিত্রের মাধ্যমে কাহিনী বিকাশ লাভ করে। নাটকের চরিত্র রূপকল্প, বাস্তব, ঐতিহাসিক বা কাল্পনিক হতে পারে।
  • কাহিনী: নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কাহিনী। কাহিনী হলো নাটকের মূল ভিত্তি। নাটকের কাহিনী ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে।
  • স্থল: নাটকের কাহিনী যে স্থানে ঘটে তাকে স্থল বলে। নাটকের স্থল বাস্তব বা কাল্পনিক হতে পারে।
  • কাল: নাটকের কাহিনী যে সময়ে ঘটে তাকে কাল বলে। নাটকের কাল বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যৎ হতে পারে।
  • বক্তৃতা: নাটকের চরিত্রদের মধ্যে যেসব সংলাপ বা বক্তৃতা হয় তাকে বক্তৃতা বলে। নাটকের বক্তৃতা কাহিনী বিকাশের পাশাপাশি দর্শকদের মধ্যে নাটকের ভাব ও মর্ম উপস্থাপন করে।
  • সংগীত: নাটকে সংগীতের ব্যবহার নাটকের মাধুর্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। নাটকের সংগীত নাটকের কাহিনী ও চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

নাটকের অন্যান্য উপাদান

নাটকের উপরোক্ত ছয়টি প্রধান উপাদান ছাড়াও নাটকে আরও কিছু উপাদান থাকতে পারে। যেমন:

  • অভিনয়: নাটকের প্রাণ হলো অভিনয়। অভিনয়ের মাধ্যমে নাটকের চরিত্র ও কাহিনী দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করা হয়।
  • দৃশ্য: নাটকের কাহিনী বিকাশের জন্য বিভিন্ন দৃশ্যের ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি দৃশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় ও স্থানের ঘটনা বর্ণনা করা হয়।
  • সজ্জা ও আলোকসজ্জা: নাটকের দৃশ্যকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য সজ্জা ও আলোকসজ্জার ব্যবহার করা হয়।
  • সঙ্গীত: নাটকে সংগীতের ব্যবহার নাটকের মাধুর্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

নাটকের প্রকারভেদ

নাটকের প্রকারভেদ অনেক। নাটকের প্রকারভেদ নির্ভর করে নাটকের কাহিনী, চরিত্র, বিষয়বস্তু, অভিনয়শৈলী ইত্যাদির উপর। নাটকের প্রধান প্রকারভেদগুলি হলো:

  • ইতিহাস নাটক: ইতিহাস নাটক হলো এমন নাটক যা ইতিহাসের কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা ব্যক্তিকে নিয়ে রচিত হয়।
  • সামাজিক নাটক: সামাজিক নাটক হলো এমন নাটক যা সমাজের কোনো সমস্যা বা বিষয়বস্তুকে নিয়ে রচিত হয়।
  • রোমান্টিক নাটক: রোমান্টিক নাটক হলো এমন নাটক যা প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ ইত্যাদি বিষয়কে নিয়ে রচিত হয়।
  • সাইকোলজিক্যাল নাটক: সাইকোলজিক্যাল নাটক হলো এমন নাটক যা মানুষের মনোদর্শন, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়কে নিয়ে রচিত হয়।
  • কৌতুক নাটক: কৌতুক নাটক হলো এমন নাটক যা হাস্যরসাত্মক বিষয়বস্তু নিয়ে রচিত হয়।
  • পৌরাণিক নাটক: পৌরাণিক নাটক হলো এমন নাটক যা পৌরাণিক কাহিনী বা দেবদেবীদের নিয়ে রচিত হয়।

নাটকের গুরুত্ব

নাটক একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম। নাটকের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। নাটক মানুষের মনোভাব ও চেতনাকে প্রভাবিত করতে পারে। নাটক মানুষের বিনোদন ও আনন্দের উৎস হতে পারে।

নাটকের গঠন কৌশল

নাটকের গঠন কৌশলকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  • প্রস্তাবনা: নাটকের শুরুতে যে অংশে নাটকের কাহিনী সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয় তাকে প্রস্তাবনা বলে।
  • সংঘর্ষ: নাটকের মধ্যবর্তী অংশে চরিত্রদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ ঘটে তাকে সংঘর্ষ বলে।
  • উপসংহার: নাটকের শেষ অংশে যে অংশে নাটকের কাহিনী সমাপ্তি লাভ করে তাকে উপসংহার বলে।

নাটকের গঠন কৌশল নাটকের কাহিনী বিকাশ ও দর্শকদের কাছে নাটকের ভাব ও মর্ম উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নাটকের প্রস্তাবনা

নাটকের প্রস্তাবনা হলো নাটকের প্রথম অংশ। এই অংশে নাটকের কাহিনী সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনা নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি দর্শকদের নাটকের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। প্রস্তাবনা সাধারণত সংক্ষিপ্ত হয়। এটিতে নাটকের সময়, স্থান, চরিত্র এবং কাহিনীর প্রধান ঘটনাবলী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়।

নাটকের সংঘর্ষ

নাটকের মধ্যবর্তী অংশ হলো সংঘর্ষ। এই অংশে চরিত্রদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষ হলো নাটকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি নাটকের কাহিনীকে গতিশীল করে তোলে। সংঘর্ষ নাটকের চরিত্রদের বিকাশ এবং নাটকের ভাব ও মর্ম উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নাটকের উপসংহার

নাটকের শেষ অংশ হলো উপসংহার। এই অংশে নাটকের কাহিনী সমাপ্তি লাভ করে। উপসংহার নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি দর্শকদের কাছে নাটকের ভাব ও মর্ম উপস্থাপন করে। উপসংহার সাধারণত প্রস্তাবনাকে পুনরাবৃত্তি করে নাটকের কাহিনীকে সমাপ্ত করে।

আমাদের আরো একটি পোস্ট দেখুন: অব্যয় পদ কাকে বলে ও কত প্রকার?

প্রস্তাবনা, সংঘর্ষ ও উপসংহারের গুরুত্ব

নাটকের গঠন কৌশলের তিনটি অংশ হলো প্রস্তাবনা, সংঘর্ষ ও উপসংহার। এই তিনটি অংশের প্রত্যেকটিই নাটকের কাহিনী বিকাশ ও দর্শকদের কাছে নাটকের ভাব ও মর্ম উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রস্তাবনা

নাটকের প্রস্তাবনা দর্শকদের নাটকের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। প্রস্তাবনা নাটকের কাহিনীর মূল বিষয়বস্তু, চরিত্র এবং ঘটনাবলী সংক্ষেপে বর্ণনা করে। প্রস্তাবনা নাটকের কাহিনীকে গতিশীল করে তোলার জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করে।

সংঘর্ষ

নাটকের সংঘর্ষ নাটকের কাহিনীকে গতিশীল করে তোলে। সংঘর্ষ চরিত্রদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। এই দ্বন্দ্ব চরিত্রদের বিকাশে সহায়তা করে। সংঘর্ষ নাটকের ভাব ও মর্ম উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার

নাটকের উপসংহার দর্শকদের কাছে নাটকের ভাব ও মর্ম উপস্থাপন করে। উপসংহার নাটকের কাহিনীকে একটি সুন্দর সমাপ্তি প্রদান করে। উপসংহার নাটকের প্রস্তাবনাকে পুনরাবৃত্তি করে নাটকের কাহিনীকে একটি পরিপূর্ণতা প্রদান করে।

Leave a Comment