প্রবন্ধটি থেকে আপনি জানতে পারবেন ধ্বনি কি বা কাকে বলে? ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি? বিষয়টি বিস্তারভাবে তুলে ধরা হলো।
ধ্বনি কাকে বলে
মানুষ তার বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে যে অর্থপূর্ণ আওয়াজ বের করে বা কান দিয়ে শোনে, তাকে ধ্বনি বলে। ধ্বনি হল ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম একক। ধ্বনির সঙ্গে সাধারণত অর্থের সংশ্লিষ্টতা থাকে না।
ধ্বনির শ্রেণিবিভাগ
ধ্বনি দুই প্রকার। যথা:
- স্বরধ্বনি
- ব্যঞ্জনধ্বনি
স্বরধ্বনি কাকে বলে
কোনোরূপ বাধা ছাড়াই যেসব ধ্বনি মুখের ভিতর থেকে সরাসরি বেরিয়ে আসে, তাকে স্বরধ্বনি বলে। স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা, তালু, দাঁত, ঠোঁট ইত্যাদি বাগ্যন্ত্রের কোনো অংশে কোনো বাধা সৃষ্টি হয় না।
স্বরধ্বনি তিন প্রকার। যথা:
- হ্রস্বস্বর
- দীর্ঘস্বর
- যৌগিকস্বর
হ্রস্বস্বর
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে কম সময় লাগে, তাকে হ্রস্বস্বর বলে। যেমন: অ, ই, উ, ঋ।
দীর্ঘস্বর
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে বেশি সময় লাগে, তাকে দীর্ঘস্বর বলে। যেমন: আ, ঈ, ঊ, ৠ।
যৌগিকস্বর
দুইটি স্বরধ্বনি একত্রিত হয়ে যে স্বরধ্বনি গঠিত হয়, তাকে যৌগিকস্বর বলে। যেমন: অয়, আও, ইয়, ইও, উয়, উও, এয়, এও, ওয়, ওও।
ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে
যেসব ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া একা-একা উচ্চারিত হতে পারে না, সেগুলিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা, তালু, দাঁত, ঠোঁট ইত্যাদি বাগ্যন্ত্রের কোনো অংশে বাধা সৃষ্টি হয়।
ব্যঞ্জনধ্বনিকে আবার অন্তঃস্থ ও উপস্থ এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
- অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনধ্বনি
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস মুখের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসে, তাকে অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন: ক, খ, গ, ঘ, চ, ছ, জ, ঝ, ট, ঠ, ড, ঢ, ত, থ, দ, ধ, ন, ম, ল, ব, ভ, ম।
- উপস্থ ব্যঞ্জনধ্বনি
যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, তাকে উপস্থ ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। যেমন: ফ, ঙ, স, শ, ষ, হ।
ধ্বনির পরিবর্তন
ধ্বনি বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন:
- শব্দের প্রয়োজন অনুসারে। যেমন: “ঘর” শব্দের “ঘ” ধ্বনি “গ” ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়ে “গর” হয়।
- ভাষার বিবর্তনের কারণে। যেমন: “কবি” শব্দের “ক” ধ্বনি “খ” ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়ে “খবি” হয়।
- ভাষার আঞ্চলিকতার কারণে। যেমন: “কাঁচা” শব্দের “ক” ধ্বনি “গ” ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়ে “গাঁচা” হয়।
ধ্বনির উচ্চারণ
ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাগ্যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের ভূমিকা থাকে। বাগ্যন্ত্রের প্রধান অংশগুলি হল:
- ফুসফুস
- শ্বাসনালী
- কণ্ঠনালী
- গলনালি
- জিহ্বা
- তালু
- মাড়ি
- দাঁত
- ঠোঁট
ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস শ্বাসনালী ও কণ্ঠনালী দিয়ে গলনালিতে প্রবেশ করে। গলনালিতে বাতাসকে নিয়ন্ত্রণ করে কণ্ঠনালীর ভিতরে অবস্থিত কন্ঠপট। কণ্ঠপট উন্মুক্ত বা বন্ধ হয়ে বাতাসের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে।
কণ্ঠনালী থেকে বাতাস জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট ইত্যাদি বাগ্যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংস্পর্শে এসে বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি উৎপন্ন করে।
স্বরধ্বনির উচ্চারণ
স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা, তালু, দাঁত, ঠোঁট ইত্যাদি বাগ্যন্ত্রের কোনো অংশে কোনো বাধা সৃষ্টি হয় না। বাতাস মুখের ভিতর দিয়ে অবাধে প্রবাহিত হয়।
স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখের উপরের দিকে উঠে গলায় অবস্থিত স্বরযন্ত্রের সাথে সংযুক্ত হয়। স্বরযন্ত্রের ভিতরে অবস্থিত স্বরপটি বাতাসের চাপে কম্পিত হয়। এর ফলে স্বরধ্বনি উৎপন্ন হয়।
স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার অবস্থান, স্বরযন্ত্রের কম্পনের মাত্রা ও মুখের বিভিন্ন অংশের সংস্পর্শের ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বরধ্বনি উৎপন্ন হয়।
ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা, তালু, দাঁত, ঠোঁট ইত্যাদি বাগ্যন্ত্রের বিভিন্ন অংশে বাধা সৃষ্টি হয়। বাতাস এই বাধা অতিক্রম করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যঞ্জনধ্বনি উৎপন্ন করে।
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাসের প্রবাহের দিক, বাধা সৃষ্টির স্থান ও বাধা সৃষ্টির ধরন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের ব্যঞ্জনধ্বনি উৎপন্ন হয়।
ধ্বনির ভূমিকা
ধ্বনি ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম একক হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। ধ্বনির মাধ্যমেই ভাষার অর্থ প্রকাশ করা হয়। ধ্বনির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ভাষার বিভিন্ন অর্থগত দিক নির্দেশ করে।
ধ্বনির ভূমিকাগুলি নিম্নরূপ:
- অর্থ প্রকাশ
ধ্বনির মাধ্যমেই ভাষার অর্থ প্রকাশ করা হয়। যেমন: “ক” ধ্বনি উচ্চারণ করলে “ক” শব্দের অর্থ বোঝা যায়।
- শব্দ গঠন
ধ্বনি একত্রিত হয়ে শব্দ গঠন করে। যেমন: “ক” ও “আ” ধ্বনি একত্রিত হয়ে “কা” শব্দ গঠন করে।
- শব্দের অর্থ বিভাজন
ধ্বনির মাধ্যমেই শব্দের অর্থ বিভাজন করা হয়। যেমন: “কা” ও “খা” শব্দের মধ্যে “ক” ধ্বনি একই হলেও “আ” ও “হ” ধ্বনির পার্থক্যের কারণে উভয় শব্দের অর্থ ভিন্ন।
- বাক্য গঠন
ধ্বনি দ্বারা গঠিত শব্দগুলি একত্রিত হয়ে বাক্য গঠন করে। যেমন: “আমি খাই” বাক্যটি তিনটি ধ্বনি দ্বারা গঠিত তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।
- ভাষার বিবর্তন
ধ্বনির পরিবর্তনের ফলে ভাষার বিবর্তন ঘটে। যেমন: “কবি” শব্দের “ক” ধ্বনি “খ” ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়ে “খবি” শব্দ হয়।
আরো দেখুন: বিরাম চিহ্ন কি বা কাকে বলে?
উপসংহার
ধ্বনি ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম একক হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। ধ্বনির মাধ্যমেই ভাষার অর্থ প্রকাশ করা হয়, শব্দ গঠন হয়, বাক্য গঠন হয় এবং ভাষার বিবর্তন ঘটে।