আমাদের এই পোস্ট থেকে আপনি জানতে পারবেন অব্যয় পদ কাকে বলে ও কত প্রকার? বিভিন্ন অব্যয় পদের সংজ্ঞা। অব্যয়পদ নিয়ে ব্যাকরণে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে যা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে থাকে। নিচে অব্যয় পদ নিয়ে বিস্তার ভাবে আলোচনা করা হলো।
অব্যয় পদ কাকে বলে
বাক্যে বা শব্দের সাথে ব্যবহৃত যে সকল ধ্বনি- বিভক্তি, বচন, লিঙ্গ ও কারকভেদে কোনভাবে পরিবর্তন হয় না, সে সকল পদকে অব্যয় বলে।
অব্যয় পদ কত প্রকার
অব্যয় পদ তিন প্রকার:
- অনুসর্গ
- সংযোজক
- আবেগসূচক
1. অনুসর্গ
যে সকল অব্যয় কোনো শব্দের পরে বসে বাক্যকে সম্পর্কিত করে, সে সকল অব্যয়কে অনুসর্গ বলে।
উদাহরণ:
- “ঘরে” (ঘর শব্দের সাথে)
- “থেকে” (যাওয়া শব্দের সাথে)
- “পর্যন্ত” (রাত্রি শব্দের সাথে)
2. সংযোজক
পদ, বর্গ ও বাক্যকে যেসব শব্দ সংযুক্ত করে, সে সকল অব্যয়কে সংযোজক বলে।
উদাহরণ:
- “এবং” (দুইটি বাক্যের সাথে)
- “কিন্তু” (দুটি বাক্যের সাথে)
- “আর” (দুটি শব্দের সাথে)
3. আবেগসূচক
ভাব বা আবেগকে প্রকাশ করে, যেসব অব্যয় সে সকল অব্যয়কে আবেগসূচক বলে।
উদাহরণ:
- “হাঁ” (আনন্দ বা সম্মতি প্রকাশ করে)
- “না” (অনন্দ বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করে)
- “ছি” (দুঃখ বা বিরক্তি প্রকাশ করে)
বিভিন্ন অব্যয় পদের সংজ্ঞা
- অনুসর্গ
- অব্যয় পদবিশেষ; শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যকে সম্পর্কিত করে।
- যেমন: ঘরে, থেকে, পর্যন্ত, মধ্যে, ছাড়া, ভিন্ন, উপরে, নিচে, কাছে, দূরে, ভেতরে, বাইরে, আগে, পরে, ইত্যাদি।
- সংযোজক
- অব্যয় পদবিশেষ; পদ, বর্গ ও বাক্যকে সংযুক্ত করে।
- যেমন: এবং, কিন্তু, অথবা, তবুও, যদি, তবে, অতএব, ইত্যাদি।
- আবেগসূচক
- অব্যয় পদবিশেষ; ভাব বা আবেগকে প্রকাশ করে।
- যেমন: হাঁ, না, ছি, ও, আহা, বাহ, ওরে, ইত্যাদি।
অব্যয় পদ ব্যবহারের সুবিধা
- অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যকে সুন্দর, সাবলীল ও অর্থপূর্ণ করা যায়।
- অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের অর্থের পরিবর্তন করা যায়।
- অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে সংযোগ বা বিচ্ছেদ স্থাপন করা যায়।
- অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা যায়।
অব্যয় পদ ব্যবহারের উদাহরণ
-
অনুসর্গ
- “ঘরে বসে পড়াশোনা করো।” (ঘরে শব্দের সাথে “ঘরে” অনুসর্গ যুক্ত হয়ে বাক্যকে সম্পর্কিত করেছে।)
- “পাহাড় থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করো।” (পাহাড় শব্দের সাথে “থেকে” অনুসর্গ যুক্ত হয়ে বাক্যকে সম্পর্কিত করেছে।)
- “রাত্রি পর্যন্ত অপেক্ষা করো।” (রাত্রি শব্দের সাথে “পর্যন্ত” অনুসর্গ যুক্ত হয়ে বাক্যকে সম্পর্কিত করেছে।)
-
সংযোজক
- “আমি এবং আমার বন্ধুরা পার্কে যাব।” (আমি শব্দের সাথে “এবং” সংযোজক যুক্ত হয়ে বাক্যকে সম্পর্কিত করেছে।)
- “তুমি স্কুলে যাবে নাকি খেলতে যাবে?” (স্কুলে যাবে নাকি খেলতে যাবে শব্দের সাথে “কি” সংযোজক যুক্ত হয়ে বাক্যকে সম্পর্কিত করেছে।)
- “যদি তুমি ভালো করে পড়ো তবে তুমি ভালো রেজাল্ট করবে।” (যদি শব্দের সাথে “তবে” সংযোজক যুক্ত হয়ে বাক্যকে সম্পর্কিত করেছে।)
-
আবেগসূচক
- “হাঁ, আমি আসছি।” (আনন্দ বা সম্মতি প্রকাশ করে।)
- “না, আমি যাব না।” (অনন্দ বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করে।)
- “ছি, কী নোংরা!।” (দুঃখ বা বিরক্তি প্রকাশ করে।)
অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যকে আরও সুন্দর, সাবলীল ও অর্থপূর্ণ করা যায়। অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের অর্থের পরিবর্তন করা যায়। অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে সংযোগ বা বিচ্ছেদ স্থাপন করা যায়। অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা যায়।
অব্যয় পদ ব্যবহারের সুবিধাগুলো আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যায়।
বাক্যকে সুন্দর, সাবলীল ও অর্থপূর্ণ করা
অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যকে আরও সুন্দর, সাবলীল ও অর্থপূর্ণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ,
- “ছেলেটি স্কুলে গেল।”
এই বাক্যটিতে অব্যয় পদ ব্যবহার না করলে বাক্যটি হয়ে যেত,
- “ছেলেটি স্কুলে যায়।”
প্রথম বাক্যটিতে “গল” অনুসর্গ ব্যবহার করে বাক্যটিকে আরও সুন্দর ও সাবলীল করা হয়েছে।
বাক্যের অর্থের পরিবর্তন করা
অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের অর্থের পরিবর্তন করা যায়। উদাহরণস্বরূপ,
- “আমি আজ স্কুলে যাব।”
এই বাক্যটিতে “আজ” অব্যয় ব্যবহার করে বাক্যটির অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে। এই বাক্যটিতে “আজ” অব্যয়ের অর্থ “এই দিন”। তাই এই বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায়, “আমি এই দিনে স্কুলে যাব।”
বাক্যের মধ্যে সংযোগ বা বিচ্ছেদ স্থাপন করা
অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে সংযোগ বা বিচ্ছেদ স্থাপন করা যায়। উদাহরণস্বরূপ,
- “আমি এবং আমার বন্ধুরা স্কুলে যাব।”
এই বাক্যটিতে “এবং” সংযোজক ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
- “আমি স্কুলে যাব না, খেলতে যাব।”
এই বাক্যটিতে “কিন্তু” সংযোজক ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে বিচ্ছেদ স্থাপন করা হয়েছে।
বাক্যের মধ্যে ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা
অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের মধ্যে ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ,
- “হাঁ, আমি আসছি।” (আনন্দ বা সম্মতি প্রকাশ করে।)
- “না, আমি যাব না।” (অনন্দ বা অস্বীকৃতি প্রকাশ করে।)
- “ছি, কী নোংরা!।” (দুঃখ বা বিরক্তি প্রকাশ করে।)
এই উদাহরণগুলো থেকে দেখা যায় যে, অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যের অর্থ, ভাব ও আবেগ প্রকাশ করা যায়।
অব্যয় পদ ব্যবহারের নিয়ম
অব্যয় পদ ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। এই নিয়মগুলো মেনে চললে বাক্যকে সুন্দর, সাবলীল ও অর্থপূর্ণ করা যায়।
অনুসর্গ
- অনুসর্গ সাধারণত শব্দের পরে বসে।
- অনুসর্গ একটি পদকে অন্য পদের সাথে সম্পর্কিত করে।
- অনুসর্গ সাধারণত একাধিক শব্দ দিয়ে গঠিত হয়।
সংযোজক
- সংযোজক সাধারণত দুটি বা ততোধিক পদ, বাক্যাংশ বা বাক্যকে যুক্ত করে।
- সংযোজক সাধারণত একটি শব্দ দিয়ে গঠিত হয়।
আবেগসূচক
- আবেগসূচক সাধারণত বাক্যের মধ্যে ভাব বা আবেগ প্রকাশ করে।
- আবেগসূচক সাধারণত একটি শব্দ বা বাক্যাংশ দিয়ে গঠিত হয়।
অব্যয় পদ ব্যবহারের কিছু উদাহরণ
-
অনুসর্গ
- “ঘরে বসে পড়াশোনা করো।”
- “পাহাড় থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করো।”
- “রাত্রি পর্যন্ত অপেক্ষা করো।”
-
সংযোজক
- “আমি এবং আমার বন্ধুরা পার্কে যাব।”
- “তুমি স্কুলে যাবে নাকি খেলতে যাবে?”
- “যদি তুমি ভালো করে পড়ো তবে তুমি ভালো রেজাল্ট করবে।”
-
আবেগসূচক
- “হাঁ, আমি আসছি।”
- “না, আমি যাব না।”
- “ছি, কী নোংরা!।”
এই পোস্টটি ও দেখতে পারেন: ব্যাকরণ কাকে বলে?
উপসংহার
অব্যয় পদ বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অব্যয় পদ ব্যবহার করে বাক্যকে আরও সুন্দর, সাবলীল ও অর্থপূর্ণ করা যায়। অব্যয় পদ ব্যবহারের সুবিধাগুলো জানা থাকলে বাক্যের অর্থ, ভাব ও আবেগ প্রকাশ করা সহজ হয়।